ওসি সালাউদ্দিনের যত অপকর্ম


ওসি সালাউদ্দিনের যত অপকর্ম

উজ্জল জিসান : রাজধানীর মিরপুর থানায় নির্যাতনে ব্যবসায়ী সুজন হত্যার পর এসআই জাহিদের পাশাপাশি ওসি সালাউদ্দিনের অপকর্ম বের হতে শুরু করেছে। এর আগে তাকে বাদ দিয়ে মিরপুর থানায় মামলা করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপর রোববার সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে ওসি সালাউদ্দিনকে জড়িয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ ওঠে ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশেই এসআই জাহিদ মিরপুর এলাকায় চাঁদাবাজি করে বেড়িয়েছেন। ওই চাঁদার একটা মোটা অঙ্ক ওসিকে ভাগ দিতে হয়েছে। সুজন হত্যার দিন ওসি সবকিছু জেনেও চুপ ছিলেন। ইচ্ছা করলেই সুজনকে বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এমন অভিযোগ বারবারই করে আসছেন নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুচি।

ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশেই সুজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ থাকলেও তদন্তকারীরা তার বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাইছেন না। এমনকি অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সালাউদ্দিনের নাম শুনলেই চুপসে যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীতে এ সালাউদ্দিনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর আগেও আদালত চত্বরে তরুণীকে নাজেহাল এবং ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ওসি সালাউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন টিকে থাকেনি সেই প্রত্যাহার আদেশ। অল্প দিনের মধ্যে তাকে লোভনীয় থানা মিরপুরে পোস্টিং দেওয়া হয়। তার পোস্টিং নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সালাউদ্দিনের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।
ওসি সালাউদ্দিনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপক আলোচিত এক ওসির নাম। যার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন, অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, নিরপরাধ মানুষকে রাজনৈতিক লেবেল লাগিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি এবং চেইন অব কমান্ড ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ কেউই বাদ যাননি এই ওসি সালাউদ্দিনের নির্যাতন থেকে। এ দিকে সুজন হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
রোববার যখন আদালত স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারিক তদন্তের আদেশ দেন, তখন একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে বলেন আদালত।

লুচি অভিযোগ করেন, মিরপুর থানায় যখন নির্যাতনে সুজনের মৃত্যু হয় তখন এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ওসি সালাউদ্দিন অনেককে থানাহাজতে সুজনের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর দেন। এ ছাড়া, সালাউদ্দিনের নির্দেশেই ব্যবসায়ী সুজনকে এসআই জাহিদ ধরে নিয়ে যায়। যা গ্রেফতারের পর আদালত চত্বরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন। যা কিছু করেছেন সবকিছুই ওসির নির্দেশে করেছেন।
সুজনের স্ত্রী লুচি আরো অভিযোগ করেন, সবকিছুই ওসি সালাউদ্দিন জানতেন। সকালে তার নির্দেশেই সুজনের স্ত্রী এবং শিশুসন্তানকে থানা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সালাউদ্দিন কোনোভাবেই এই হত্যার দায় এড়াতে পারবেন না। মিরপুর জোনের ডিসির কাছেও পরিবারের পক্ষ থেকে সুজনকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।
এর আগেও ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১২ সালের ২৯ মে আদালত পাড়ায় বিচারপ্রার্থী এক তরুণী মোটরসাইকেলে তার বাবার সঙ্গে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর পুলিশ তাকে আদালতপাড়ায় শ্লীলতাহানি করে। এই ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী। দিনভর ওই তরুণীকে কোতোয়ালি থানায় আটকে রাখা হয়। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালি জোনের তখনকার পুলিশের এসি রাজীব আল মাসুদ ও বিতর্কিত এই ওসি সালাউদ্দিন। পরে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল নিজ হেফাজতে তরুণীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
পরের দিন কোতোয়ালি জোনের এসি রাজীব আল মাসুদ ও ওসি সালাউদ্দিনকে ক্লোজ করা হয়। ওসি সালাউদ্দিনকে কোতোয়ালি থানা থেকে ক্লোজ করা হলে ওই এলাকার অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল ওসির চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ ছিলেন।

২০১২ সালের আগস্ট মাসে সালাউদ্দিনকে মিরপুর মডেল থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।  শুরু হয় সালাউদ্দিনের আরো নির্মম স্বেচ্ছাচারিতা। শুরুতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আযাহারুল ইসলামকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রেখে হাত-পা ভেঙে দেয়। হাত-পায়ের নখ তুলে নেয় পুলিশ। এরপর ২ লাখ টাকা দাবি করে। আযাহার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। পরে কয়েকদিন তাকে খুঁজে না পাওয়ায় পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশেই এ কাজ করা হয়।
এদিকে গত বছরের ১৭ মার্চ মিরপুরে মাহবুব বাবলু নামের এক যুবকের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ। ওই ব্যক্তি এখন পঙ্গু। গত বছরের ১০ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে রাজধানীর মিরপুর থানার কাজীপাড়া এলাকা থেকে মিল্টন ও শিপন নামে দুই যুবদল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। থানায় নেওয়ার আধা ঘণ্টা পরে তাদের আহত অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের হাত-পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া, আনিসুর রহমান, আবদুর রহমান, মালেক মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, বজলুর রহমান, ফরহাদুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল মান্নানসহ অন্তত ১৫-২০ জন শিক্ষক এই ওসির রোষানলে পড়ে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন। তাদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওসি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Shillong Teer Counter ( Hitt Number )

PPPoE CONNECTION IS ALREADY ACTIVE-CLOSING PREVIOUS ONE

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন