অভিজাত পাড়ায় অসামাজিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পুলিশের

অভিজাত পাড়ায় অসামাজিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পুলিশের

স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর গুলশান ও বনানী থানা এলাকায় বিভিন্ন গেস্ট-রেস্ট হাউস ও আবাসিক হোটেলের আড়ালে দেদার চলছে মদ, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপ। অভিজাত এলাকা হিসেবে বাড়তি সুবিধায় এই এলাকাগুলোতে ক্লাব, গেস্ট হাউসের আড়ালে মদ জুয়ার রমরমা আসর বসছে। গেস্ট হাউসের আড়ালে গড়ে তোলা হয়েছে মিনি পতিতালয়। এসব আস্তানায় নিরাপদ ভেবে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের আনাগোনা রয়েছে। আবার প্রলোভনে ফেলে সাধারণ মানুষকে বস্ন্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সর্বস্ব। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অপকর্ম চললেও তারাও যেন এক প্রকার নির্বিকার। লোক দেখানো দু'একটি অভিযান চললেও পরে আবার ক্লাবের কর্ণধারদের যোগসাজসের কারণে ম্যানেজও হয়ে যায়।


সূত্র জানায়, দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাত নামলেই অভিজাত এলাকার পরিবেশ হয়ে যায় অন্যরকম। সব রোডে দ্রুতবেগের গাড়ির ছুটে চলা দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে দ্রুত কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ছুটে চলা। কিন্তু আদৌ তা নয়। সব গাড়ি মিশছে কোনো ক্লাব বা রেস্ট হাউসে। আর সেখানেই চলছে যত অপকর্ম। ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে কুরুচির বহিঃপ্রকাশ। মদ, জুয়া সেই সঙ্গে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে বেহায়াপনা সবই চলছে এখানে। দেখে মনে হবে প্রশাসনের যেন কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই এখানে। অথচ সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি ছাড়া সম্পূর্ণ অনুমোদনহীনভাবেই এসব এলাকার ক্লাব, রেস্টুরেন্ট এবং রেস্ট হাউসে প্রকাশ্যই সব ধরনের মাদক বেচাকেনা চলছে। এমনকি গতবছরের ১ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও কে শোনে কার কথা। প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজের বিনিময়ে চলছে এখানে সব অপকর্ম।

অপর একটি সূত্র জানায়, গুলশান-২ এর ক্যাপিটাল ক্লাবের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অনুমোদনহীনভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো। সম্প্রতি র‌্যাব-১ এর একটি দল ব্যাপক অভিযান চালায় সেখানে। উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকার মদ বিয়ার। এ ব্যাপারে গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলা নম্বর ২২, (তাং ৩০/০৮/২০১৪)। এরপর কিছুদিন ক্যাপিটাল ক্লাব বন্ধ থাকার পরে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কে এম মনজুরের যোগসাজসে আবারো সেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই জমজমাট মদের আসর বসছে। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যেই বাইরেও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কোর্নিয়া ক্লাব, লেক ভিউ, লেক ডিপ্লোমা, ফু-ওয়াং, কোরিয়ান ক্লাব এবং কেএনবিতে চলছে বিভিন্ন অপকর্ম।

সূত্র জানিয়েছে, গতবছর নভেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তরফ থেকে অবৈধ মদ-বিয়ার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত এসব হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিককে ডেকে অবিলম্বে মদ-বিয়ার বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে রেস্টুরেন্টের প্রকাশ্য স্থানে 'মদ-বিয়ার বিক্রি করা হয় না' মর্মে নোটিশ টাঙিয়ে দিতে বলা হয়। মদ-বিয়ার বিক্রির অভিযোগে বেশকিছু হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে 'মদ-বিয়ার বিক্রি হয় না মর্মে' কোথাও কোনো নোটিশ দেখা যায়নি।

বিভিন্ন নামিদামি হোটেলের বলরুম ভাড়া নিয়ে ডিজে পার্টিতে প্রকাশ্যেই মদ, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই পার্টিতে পুলিশসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও অনেক সময় উপস্থিত থাকেন। তাদের সামনেই চলে সব কারবার। একপাশে চলে নাচ অন্যপাশে রমরমা মাদকের আসর। অনেক জুয়ার আসরও বসানো হয়। কোটি কোটি টাকার খেলা চলে এখানে।

গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিকটও এ ধরনের অভিযোগ আসছে। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।

এদিকে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, মাদক প্রতিরোধে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) খন্দকার তৌফিক আহমেদ বলেন, আমরা নতুন এক তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকা ধরে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই যে সকল বার, ক্লাব, রেস্টুরেন্ট এমনকি রেস্ট হাউসের নামে মদ বিয়ারসহ মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

PC Based MikroTik Router OS Installation

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন

লটারি জেতার কার্যকরী কৌশল জানেন কি?টিপস ও ট্রিকস