বিবাহ নিয়া কথাবার্তা

sajeeb,zunayed,junayed,

বিবাহ নিয়া কথাবার্তা

লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, বিয়ে করার পরপরই আমি জানতে পেরেছি, সুখ কী জিনিস। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে…!
কত দেরি? নিজের কথা বলার আগে কবিগুরুর কথাই না হয় বলি। কবিগুরু বলে কথা-
রবি ঠাকুর প্রিয়নাথ সেনকে নিজের বিয়ের নেমন্তন্ন জানিয়ে যে চিঠি লিখেছিলেন তার মাথায় লেখা ছিল – ‘আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু হায়’।
ছেলেটি বলেছিল মেয়েটির জন্য সে নরক পযর্ন্ত যেতে রাজি। ঈশ্বর তার কথা শুনেছে। তাদের বিয়ে শেষ পর্যন্ত হয়েছে।
তাহলে কি বিয়ের কিছুই ভাল নেই? আছে। আছে। একটা গ্রিক মতবাদ বলি-
যদি ভাল স্ত্রী পাও, তা হলে তোমার নিজের লাভ।
কারন তখন তুমি সুখী হতে পারবে।
কিন্তু যদি খারাপ স্ত্রী পাও তা হলে দেশের লাভ, কারন তখন
তুমি দার্শনিক হতে পারবে।
এবার বিয়ে নিয়ে একটা সিনেমার কথা বলি। রাজেশ খান্না আমার বরাবরই পছন্দ। শর্মিলা ঠাকুরও। এই দুইজনের চমৎকার একটা সিনেমা আছে। আবিস্কার। তুমুল প্রেমের পর বিয়ে করেছিল ওরা দুজন। তারপর কিছুটা সময় গেছে। এখন বিয়ের দিনটার কথাও মনে পড়ে না। সেই তুমুল প্রেম তাহলে কই গেলো?

বিয়ে বার্ষিকীর দিন ওরা এক বিছানায় আধ শোয়া হয়ে ভাবতে লাগলো পুরোনো দিনগুলোর কথা। বুঝতে চেষ্টা করলো কোথায় গেল সেই প্রেম। বিবাহিতদের বি স্বপ্ন থাকে না? বাসু ভট্টাচার্যের এই ছবিটা একদমই অন্যরকম।
এবার আরও ভাবের কিছু কথাবার্তা হোক। আবারও কবিগুরু। শেষের কবিতা থেকে বলি:
যোগমায়া বললেন, "মা লাবণ্য, তুমি ঠিক বুঝেছ?"
"ঠিক বুঝেছি মা।"
"অমিত ভারি চঞ্চল, সে কথা মানি। সেইজন্যেই ওকে এত স্নেহ করি। দেখো-না, ও কেমনতরো এলোমেলো। হাত থেকে সবই যেন পড়ে পড়ে যায়।"
লাবণ্য একটু হেসে বললে, "ওঁকে সবই যদি ধরে রাখতেই হত, হাত থেকে সবই যদি খসে খসে না পড়ত, তা হলেই ওঁর ঘটত বিপদ। ওঁর নিয়ম হচ্ছে, হয় উনি পেয়েও পাবেন না, নয় উনি পেয়েই হারাবেন। যেটা পাবেন সেটা যে আবার রাখতে হবে এটা ওঁর ধাতের সঙ্গে মেলে না।"
"সত্যি করে বলি বাছা, ওর ছেলেমানুষি আমার ভারি ভালো লাগে।"
"সেটা হল মায়ের ধর্ম। ছেলেমানুষিতে দায় যত-কিছু সব মায়ের। আর ছেলের যত-কিছু সব খেলা। কিন্তু আমাকে কেন বলছ, দায় নিতে যে পারে না তার উপরে দায় চাপাতে।"
"দেখছ-না লাবণ্য, ওর অমন দুরন্ত মন আজকাল অনেকখানি যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দেখে আমার বড়ো মায়া করে। যাই বল, ও তোমাকে ভালোবাসে।"
"তা বাসেন।"
"তবে আর ভাবনা কিসের।"
"কর্তা-মা, ওঁর যেটা স্বভাব তার উপর আমি একটুও অত্যাচার করতে চাই নে।"
"আমি তো এই জানি লাবণ্য, ভালোবাসা খানিকটা অত্যাচার চায়, অত্যাচার করেও।"
"কর্তা-মা, সে অত্যচারের ক্ষেত্র আছে; কিন্তু স্বভাবের উপর পীড়ন সয় না। সাহিত্যে ভালোবাসার বই যতই পড়লেম এই কথাটা বার বার আমার মনে হয়েছে, ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানেই যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি, নিজের ইচ্ছেকে অন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে যেখানে জুলুম, যেখানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলিয়ে অন্যকে সৃষ্টি করব।"
"তা মা, দুজনকে নিয়ে সংসার পাততে গেলে পরস্পর পরস্পরকে খানিকটা সৃষ্টি না করে নিলে চলেই না। ভালোবাসা যেখানে আছে সেখানে সেই সৃষ্টি সহজ, যেখানে নেই সেখানে হাতুড়ি পিটোতে গিয়ে, তুমি যাকে ট্রাজেডি বল, তাই ঘটে।"
"সংসার পাতবার জন্যেই যে মানুষ তৈরি তার কথা ছেড়ে দাও। সে তো মাটির মানুষ, সংসারের প্রতিদিনের চাপেই তার গড়নপিটোন আপনিই ঘটতে থাকে। কিন্তু, যে মানুষ মাটির মানুষ একেবারেই নয় সে আপনার স্বাতন্ত্র৻ কিছুতেই ছাড়তে পারে না। যে মেয়ে তা না বোঝে সে যতই দাবি করে ততই হয় বঞ্চিত, যে পুরুষ তা না বোঝে সে যতই টানা-হেঁচড়া করে ততই আসল মানুষটাকে হারায়। আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ স্থলেই আমরা যাকে পাওয়া বলি সে আর কিছু নয়, হাতকড়া হাতকে যেরকম পায় সেই আর-কি।"
"তুমি কী করতে চাও, লাবণ্য।"
"বিয়ে করে দুঃখ দিতে চাই নে। বিয়ে সকলের জন্যে নয়। জান কর্তা-মা, খুঁৎখুঁতে মন যাদের তারা মানুষকে খানিক খানিক বাদ দিয়ে দিয়ে বেছে বেছে নেয়। কিন্তু বিয়ের ফাঁদে জড়িয়ে প'ড়ে স্ত্রীপুরুষ যে বড়ো বেশি কাছাকাছি এসে পড়ে-- মাঝে ফাঁক থাকে না, তখন একেবারে গোটা মানুষকে নিয়েই কারবার করতে হয় নিতান্ত নিকটে থেকে। কোনো-একটা অংশ ঢাকা রাখবার জো থাকে না।"
"লাবণ্য, তুমি নিজেকে জান না। তোমাকে নিতে গেলে কিছুই বাদ দিয়ে নেবার দরকার হবে না।"
"কিন্তু, উনি তো আমাকে চান না। যে আমি সাধারণ মানুষ, ঘরের মেয়ে, তাকে উনি দেখতে পেয়েছেন বলে মনেই করি নে। আমি যেই ওঁর মনকে স্পর্শ করেছি অমনি ওঁর মন অবিরাম ও অজস্র কথা কয়ে উঠেছে। সেই কথা দিয়ে উনি কেবলই আমাকে গড়ে তুলেছেন। ওঁর মন যদি ক্লান্ত হয়, কথা যদি ফুরোয় তবে সেই নিঃশব্দের ভিতরে ধরা পড়বে এই নিতান্ত সাধারণ মেয়ে, যে মেয়ে ওঁর নিজের সৃষ্টি নয়। বিয়ে করলে মানুষকে মেনে নিতে হয়, তখন আর গড়ে নেবার ফাঁক পাওয়া যায় না।"
"তোমার মনে হয় অমিত তোমার মতো মেয়েকেও সম্পূর্ণ মেনে নিতে পারবে না?"
"স্বভাব যদি বদলায় তবে পারবেন। কিন্তু বদলাবেই বা কেন। আমি তো তা চাই না।"
"তুমি কী চাও।"
"যতদিন পারি, নাহয় ওঁর কথার সঙ্গে, ওঁর মনের খেলার সঙ্গে মিশিয়ে স্বপ্ন হয়েই থাকব। আর স্বপ্নই বা তাকে বলব কেন। সে আমার একটা বিশেষ জন্ম, একটা বিশেষ রূপ, একটা বিশেষ জগতে সে সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। নাহয় সে গুটি-থেকে-বের-হয়ে-আসা দু-চারদিনের একটা রঙিন প্রজাপতিই হল, তাতে দোষ কী-- জগতে প্রজাপতি আর-কিছুর চেয়ে যে কম সত্য তা তো নয়-- নাহয় সে সূর্যোদয়ের আলোতে দেখা দিলে আর সূর্যাস্তের আলোতে মরেই গেল, তাতেই বা কী। কেবল এইটুকুই দেখা চাই যে সেটুকু সময় যেন ব্যর্থ হয়ে না যায়।"
"সে যেন বুঝলুম, তুমি অমিতর কাছে নাহয় ক্ষণকালের মায়া-রূপেই থাকবে। আর নিজে? তুমিও কি বিয়ে করতে চাও না। তোমার কাছে অমিতও কি মায়া।" লাবণ্য চুপ করে বসে রইল, কোনো জবাব করলে না।
অনেক অনেক ভাবের কথা হল। এবার অন্য কথা। বিয়ে নিয়ে সেরা কথা সম্ভবত এটাই:
'তুমি দিব্যি ছিলে, একটা সাপ এসে তোমাকে ছোবল দিল – এটা হল সম্বন্ধ করে বিয়ে, আর সাপটা দিব্যি ছিল, তুমি তার লেজে পা দিয়ে ছোবল খেলে – এটা হল প্রেম করে বিয়ে। যেভাবেই কর না কেন, করেছ তো বাপু বিয়েই’।
অনেক ভাবের কথা হল। বিয়ে নিয়ে আসল আর সেরা কথাটাই বলি:
‘তুমি দিব্যি ছিলে, একটা সাপ এসে তোমাকে ছোবল দিল – এটা হল সম্বন্ধ করে বিয়ে, আর সাপটা দিব্যি ছিল, তুমি তার লেজে পা দিয়ে ছোবল খেলে – এটা হল প্রেম করে বিয়ে। যেভাবেই কর না কেন, করেছ তো বাপু বিয়েই’।
লেখার নীচের অংশটুকু সাঈদের জন্য
বিয়ে: আকাঙ্ক্ষা থেকে অনীহা
প্রশ্ন হল আমি আজ এই পোস্ট কেন লিখলাম? বারণ একটা অবশ্যই আছে Party
অত্যন্ত সুশীল পোস্ট দিলাম। কারণ গতকাল ব্লগাররা কাজী সাহেবের নানা বচন শুনছে বইলা নিজেকে সুশীল পথে নিয়া আসলাম।
বিবাহ নিয়া ভদ্রলোক আর সুশীল টাইপ এই পোস্ট লিখতে গিয়ে জ্যোতির কথা মনে পড়লো। মেয়েটা একটু উল্টাপাল্টা আছে, আমেরিকা থেকে সবার জন্য ডলার আসে, অথচ জ্যোতির জন্য আসে রুবেল। এইটা কিছু হইল?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

PC Based MikroTik Router OS Installation

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন

লটারি জেতার কার্যকরী কৌশল জানেন কি?টিপস ও ট্রিকস