আপনাদের বাচ্চাটা আশেপাশের আর সব বাচ্চার মত সাধারণ না। অসাধারণ।

sajeeb,zunayed,junayed

আপনাদের বাচ্চাটা আশেপাশের আর সব বাচ্চার মত সাধারণ না। অসাধারণ।

পাশের বাসার পিচ্চিটার নাম রায়াত। বয়েস গত ফেব্রুয়ারীতে তিন হয়েছে। ভাতিজার নামে নাম আর দেখতে পুরাই জাপানিজ বাচ্চাদের মত কিউট বলে খুবই আদর লাগে। বাসায় আসলে সোজা আমার রুমে চলে আসে আর ঘুরঘুর করতে থাকে, এটা ওটা ধরে। বোতল ওর কাছে খুবই প্রিয়, ও আবার ছিপি দেখতেই পারে না। তাহলে বুঝেন পানিভর্তি বোতল ওর নাগালে গেলে কি হয়!! ওর প্রিয় বস্তুর লিস্টে আরও অনেক কিছু আছে তা পরে বলছি।

এখন ও কে নিয়ে আমাদের পুরো এপার্টমেন্টের উদ্বিগ্ন। ওর চিকিৎসক আব্বা-আম্মার উদ্বিগ্নতা আমার চোখে পড়েনি। সমস্যা হল- ও কথা বলে না। বয়স যখন ১০ কি ১১ মাস তখন একটু একটু কথা বলেছিল, মাম-পাপ্পা-দাদ্দা-বুব্বু এসব বলত কিন্তু এরপর থেকে একেবারেই অফ। আগে হাসত এখন হাসেও না। কাঁদেও কদাচিৎ। কাঁদলে অবশ্য পাড়ায় খবর হয়ে যায়। আমরা ওর আব্বাকে জিজ্ঞেস করি- ‘আঙ্কেল ও কথা বলে না কেন, আগে তাও বলত’ আঙ্কেল বলে- ‘কথা বলবে সমস্যা নাই কোন’।
ওর বাবা যেহেতু নিজে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, তাই উনার কথায় ভরসা পাই।

ছেলেটার মেজাজ দিনকে দিন তিরিক্ষি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। যখন ওর কাছ থেকে ছিপি ছাড়া পানি ভর্তি বোতল নিয়ে নেয়া হয়, তখন যে চাহনি দেয়- ঐটাকে অন্তত কিউট বলা যায় না। একেবারে ‘খেয়ে ফেলব খেয়ে ফেলব’ ভাব। এইতো আজকে সন্ধ্যায় রুমে এসেছে। দেখি আমার টেবিল থেকে ক্যালকুলেটর নিয়েছে। এখানে বলে রাখি ক্যালকুলেটর রায়াতের পছন্দের একটি জিনিস। তো সে বোতলের ছিপির মত এর কভারটাও রাখল না, ফেলে দিল। বুকসেলফ থেকে (চেয়ার ঠেলে ওটার উপর উঠেছে সে) একটা বই নিল। আমি ফেসবুক চালাতে চালাতে তাকে অবজারভ করছি কি করে! দুটো জিনিস নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে আর পুতপুত করে তাকিয়ে দেখে আমি দেখি কিনা :p আড়চোখে দেখলাম – এবার ক্যালকুলেটর টিপছে। এইবার উঠে গিয়ে যা দেখলাম তাতে চক্ষু আমার ছানাবড়া। সে Quantum Mechanics এর একখান বই খুলে বসেছে আর Calculator এ যে কি টিপছিল আল্লাহ-ই জানেন। যে পাতা খোলা সেখানে একটা সমস্যা (Math Problem) আছে।
ওর আব্বা-আম্মাকে এই ঘটনা এখনো বলা হয়নি, কাল সকালে বলব ইনশা আল্লাহ্‌। যাক ওর এই ঘটনা থেকে একটা কাহিনী মনে পড়ে গেল। আইনস্টাইন সাহেবও নাকি জন্মের পর থেকে ৩-৪ বছর কোন টু শব্দ করেননি, কোন কথা বলতেন না। তার বাবা-মা অবশ্য ভেবেছিল- উনি সাধারণ বাচ্চাকাচ্চার মত না, একটু Abnormal
তো আইনস্টাইনের বয়স যখন ৪ একদিন খাওয়ার টেবিলে হঠাৎ বলে উঠলেন-
‘আজকের স্যুপটা অনেক গরম হয়েছে’
তার বাবা-মা তো এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল, জিজ্ঞেস করল-
‘তুমি কথা বলতে পার?’
বাচ্চা আইনস্টাইন বলল,
‘হুম, পারি তো’
বাবা-মা বললেন,
‘এতদিন বলনি কেন তাহলে’
আইনস্টাইন বললেন, ‘প্রয়োজনবোধ করিনি তাই’  :p
আমাদের রায়াতও কি ‘প্রয়োজনবোধ’ করছে না নাকি! সেটাই ওর আব্বা-আম্মাকে জানান দিতে হবে। Quantum Mechanics এর ঘটনাটা দৈবাৎ না হলে তার বাবা-মাকে বুঝাতে হবে- ‘আপনাদের বাচ্চাটা আশেপাশের আর সব বাচ্চার মত সাধারণ না। অসাধারণ।’

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

PC Based MikroTik Router OS Installation

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন

লটারি জেতার কার্যকরী কৌশল জানেন কি?টিপস ও ট্রিকস