কিছু মানুষ কেবলই সৃতিতে সুন্দর। কেবলই সৃতিতে !!

স্কুল জীবনের দিন গুলো  আজও সৃতির পাতায় দূরবর্তী অতীত হয়ে উঠে নি; কেবলই মনে হয় এই তো সেদিন...!!

আমাদের সময় প্রায় সব ক্লাসেই এরকম একজন থাকত যার নিকট আত্মীয়ের কেউ প্রায়ই বিদেশ থেকে এটা সেটা পাঠাত, এবং সেটা সে ক্লাসে নিয়ে এসে সবাইকে দেখাত। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখত, অতি উৎসাহী কেউ হাতে নিয়ে দেখত। সব ক্লাসেই আবার একজন চোর থাকত।  যে অবশ্যই  বিদেশীর জিনিস চুরি করে নিয়ে যেত।

এমন কেউ কী আছে যে জীবনে মুগ্ধ বিস্ময় ভালোলাগা নিয়ে কোন মেডামের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নি ?  সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবেনি, ফ্যানটা খুলে পড়লে কার মাথায় গিয়ে পড়বে ? এমন কেউ কী আছে যে স্কুলের অলস দুপুরে বেঞ্চের উপরে কলম দিয়ে নিজের নামখানা লিখে রাখেনি ?? এই পৃথিবীতে  মানুষ আসলে নিজের একটা অস্তিত্ব চায়। সে চায় কোথাও না কোথাও তার একটা অস্তিত্ব জিইইয়ে থাকুক... !!  

প্রেমের মানদণ্ডে আমরা ভীরু কাপুরুষ ছিলাম, সাহস করে বলতে পারতাম না; যদি অপমানিত হই !! জীবনে কত সুড়ঙ্গ পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি, কত ঝড় জলোচ্ছ্বাস কত ভুল মানুষের সাথে কাটিয়ে দিয়েছি- তবু সদ্য গজানো গোঁফ উঠা বালকের কাউকে দেখা মাত্র হার্টবিট কাঁপতে থাকা দিন গুলোই জীবনে শ্রেষ্ঠ রোমাঞ্চকর হয়ে থাকে !

এমন কেউ কী আছে যে স্কুলের দরখাস্তে বাবার সিগনেচার নকল করেনি ? পরীক্ষার রিপোর্ট কার্ডে কলম দিয়ে আঁকা আঁকি করে নাম্বার বাড়ানোর চেষ্টা করেনি ? নাম্বার কম পেলে আম্মুকে গিয়ে ' সবাই কম পেয়েছে' এই কথা বলেনি এমন কেউ কী নেই ?

আমাদের প্রত্যেকের স্যারের মার হজম করার নিজস্ব নিজস্ব পদ্ধতি ছিল। শরীর টাইট করে বেত্রাঘাতের অপেক্ষায় সিরিয়াল ধরে দাড়াতাম।  কেউ হাতের তালু শক্ত করে রাখত, কেউ  দুখী দুখী মুখ করে চেষ্টা করত স্যারের সিম্পেথি পাবার । কেউ আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যেত, বেত্রাঘাত তো দূরের কথা, একে এখনি ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

আমাদের সময় 'পরীক্ষায় বন্ধু চেনা যায়' জাতীয় একটা প্রবাদ ছিল। কিছু হারামি থাকবেই যারা সারা বছর টিফিনে ভাগ বসিয়ে পরীক্ষার সময় চোখ রাঙিয়ে ফেলত।  সব ক্লাসেই একজন থাকত যে সব সময় স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে আসত এবং নিয়ম মাফিক পিটি স্যারের  উত্তম-মধ্যম খেতে খেতে শপথ করত - কালকে থেকে জুতা পায়ে দিয়ে আসবে।

এখন মাঝে মাঝে সকালে  বের হলে, ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাফ প্যান্টে ইন করা শার্টে ছেলেদের দেখতে পাই।  দেখলে মনে পড়ে-  একসময় আমিও এরকম কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম।  চুল আঁচড়িয়ে আগের দিন রাতে গুছিয়ে রাখা ব্যাগ কাধে নিয়ে বের হতাম। রোল কলের সময় চিৎকার করে ' প্রেসেন্ট স্যার '  বলা অন্যরকম এক জীবন ছিল। যে জীবন স্কুল পালিয়ে খাঁ খাঁ রোদে শহরের রাস্তায় চষে বেড়িয়েছে। যে জীবন বল্টু ভাইয়ের এক টাকার চানাচুর পয়সা না দিয়ে খেয়ে এসেছে ...! আচংকা প্রেমে পড়েছিল, যে জীবন।

এখন তাদের সাথে দেখা হলে আমি পালিয়ে যাই। কিছু মানুষ কেবলই সৃতিতে সুন্দর।  কেবলই সৃতিতে !!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন

লটারি জেতার কার্যকরী কৌশল জানেন কি?টিপস ও ট্রিকস

এডোবি ফটোশপ কিবোর্ড শর্টকাট