হায়রে ভালবাসা 😭💔

হায়রে ভালোবাসা
ভআলোবাসা
বলেন তো,সত্যি বলতে ভালোবাসা কি ?
আমার কাছে মনে হয় ভালোবাসা মানে একটা গভীর অনুভূতি যা শক্তভাবে আবেগের জালে জড়িয়ে দুটি মানুষকে এক করে ফেলে । এটা এমনি স্বর্গীয় একটা সুখের অনুভূতি যা থেকে মানুষ বের হতে পারে না । এমনি একটা দৃঢ় অনুভূতি এই ভালোবাসা যা একটা ছেলেকে/মেয়েকে পারে তার এত বছরের পরিবার থেকে বের করে আনতে ,পারে সারাটা জীবন ভালোবাসার মানুষটির নামে অলিখিত দলিল করে দিতে ,পারে শত ভুল করলেও ভালোবাসার মানুষটির একটি স্যরিতে সবকিছু ভুলিয়ে দিতে !এমনকি জীবনও নিয়ে নিতে পারে এই ভালোবাসা !

বাপরে বাপ !ভয় পাইছি !

কিছু কাহিনী বলি ভালোবাসার ,দেখি আপনারাও ভয় পান কিনা !

মেঘ আর মেঘলা ।পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া তাদের সবসময় সন্ধ্যার পর একসাথে ক্যাম্পাসে ঘুরতে দেখা যাবেই ।মেঘলার যেকোন দরকারে সবার আগে মেঘকেই কাছে পায় । একবার বাস ধর্মঘটে মেঘলার বাসায় যাওয়া রিস্ক হয়ে পড়ে ,তাই মেঘ এত মাইল পেরিয়ে তাকে পৌঁছে দিয়ে আসে ।কিন্তু নিজে ফেরার পথে কি যে ঝামেলাতে পড়েছিল !তবুও মুখে হাসি নিয়ে বলেছিল ,যাক মেঘলাকে তো ভালোভাবে দিয়ে আসতে পারছি ।কিন্তু অল্প কিছু মানুষই জানে এই ছেলেটাই মেঘলার আগে কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসতো !কিন্তু হয়তো তার ভাগ্য মেঘলার সাথেই লেখা ছিল ,তাই এত ভালোবাসার এতদিনের রিলেশনটা ব্রেকআপ হয়ে যায় ওর ।ভেঙে পড়ে মেঘ ।

খুঁটি হয়ে পাশে দাঁড়ায় মেঘলা ,তার এতদিনের গোপনে ভালোবাসার মানুষটাকে ভাঙতে দিবে না সে । এমনভাবে আগলে ধরে যে অনাগ্রহে থেকেও মেঘলার মাঝে আটকে যায় সে ।চায়নি মেঘ আবার নতুন কাউকে বসাতে আগের ক্ষতস্থানে ,কিন্তু মেঘলার ঐ জায়গাটাই যে চরম কাঙ্খিত ।তাই মেঘলার ভালোবাসার জোরেই আজ মেঘও আবার স্বাভাবিক ,মেঘলাও স্বপ্ন পূরণে সুখী ।শুধু কষ্ট হয় যখন মেঘ অবচেতনভাবে বইয়ের দোকানে গিয়ে কোন বই হাতে নিয়ে বলে বসে ,"এটা ওর খুব প্রিয় বই ছিল !" বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেনু কার্ড দেখে বলে বসে ,"এটা ওর প্রিয় ডিশ ছিল !"

তখন মেঘলা একটা হালকা হাসি দেয় যার মাঝে হাজারটা ভারী অশ্রুকণা গোপন থাকে !মেঘ কি আসলেও মেঘলা কে ভালোবাসতে পেরেছে ? আপাতদৃষ্টিতে দেখলে তো পেরেছে ,কিন্তু সেটা কতটুকু মন থেকে আর কতটুকু দায়িত্ববোধ থেকে মেঘ কি নিজেও তা জানে ?প্রথম প্রেম অনেক বিশেষ একটা কিছু ,সেটা কখনো ভোলা যায় না । তাই তো সেই প্রথম প্রেমকে সার্থক করেছে নীল আর নীলিমা !


নীল আর নীলিমা ।অর্থনৈতিক তারতম্যটা পাত্তা না দিয়ে অনেক ভালোবেসেছিল। কথা দিয়েছিল যেভাবেই পারুক ভালোবাসাকে সার্থক করবেই তারা ।নীল এর টাকার ক্ষমতা নয় ,অপরিসীম ভালোবাসার ক্ষমতাই নিলীমার জীবনে সব সুখ এনে দিতে যথেষ্ট ছিল ।কিন্তু ভালোবাসা ওদের অন্ধ করলেও বাবা মাকে তো আর নির্বোধ করেনি ,বাসায় জানাজানি হলে সোজা মানা করে দেয় মেয়েকে ।অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে নিলীমা ।মা বাবা দিবেই না ।একসময় পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে সরে আসে নিলীমা ।কিন্তু নীলকে কষ্ট দেবার অপরাধবোধ আর ভালোবাসা হারানোর কষ্টে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় সে ।একসময় সিদ্ধান্ত নেয় বাসা থেকে পালানোর ।পালিয়ে চলে আসে তার নীলের কাছে ।বিয়ে করে তারা ।পরিবার থেকে মেনে নেয়নি এই বিয়ে ।নীলিমা এখন বাড়িছাড়া ।তারা নিজেরা ভালো আছে ।কিন্তু মা বাবা কে এভাবে কষ্ট দিয়ে এ কেমন ভালো থাকা ?আমাদের এতদিনের পরিবারের দোয়া ছাড়া সুখি হওয়া যায় ?এরা তো তাও ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে ,অনেকে তো অনেক ভালোবেসেও পায়না মনের মানুষকে ।তেমনি একজন পূর্ণতা ।


পূর্ণ আর পূর্ণতা !পূর্ণতা অনেক প্রাণোচ্ছ্বল একটা মেয়ে ।সবসময় হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখে বন্ধুমহল ।একটু গভীরভাবে ওকে দেখার সুযোগ হলে ওর চোখের দিকে তাকালে চমকে উঠতে হবে !ওর চোখ দুটোতে এক রাজ্য বিষণ্নতা ।হাসিটা শুধু ওর ঠোঁটের ,ওর মনের না ।খুব ভালোবাসে একজনকে ।খুব ভালোবাসে ।পূর্ণ ।ওর জীবনের স্বপ্নপুরুষ ।সেই ছয়বছর আগে থেকে ভালোবাসতে বাসতে একদিন ভেবেছিল আর কত গোপনে ভালোবাসবে ?মেয়ে হয়ে ভালোবাসার প্রপোজ করা যায় না ,এই যুক্তির ক্ষেতা পুরী দিয়ে প্রপোজ করেছিল পূর্ণকে ।পূর্ণ প্রথমে বুঝিয়ে শুনিয়ে পরে বাধ্য হয়ে খুব বাজেভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছে পূর্ণতাকে ।বাবাছাড়া তার পরিবারটার বড় ছেলে সে ,তাকে দাঁড়াতে হবে ,পরিবারের ভাই বোনদের
দায়িত্ব নিতে হবে ,পরে নিজের চিন্তা ।কিন্তু প্রেম ভালোবাসায় জড়ানো মানে কদিন পরেই মেয়ের বাসা থেকে বিয়ের চাপ ।তাই পরিবারের কথা ভেবে ফিরিয়ে দেয় পূর্ণতাকে ।স্বপ্নালু চোখে আজো তাকিয়ে আছে পূর্ণতা ,তার ভালোবাসার কাছে হার মেনে একদিন ফিরবে তার কাছে পূর্ণ ,এই
আশায় ।জানি না ফিরবে কিনা কিন্তু এইভাবে অনিশ্চিতভাবে স্বপ্ন দেখে বাঁচা যায় ?

কিভাবে পারে এতটা ভালোবাসতে একা ?আর অনিশ্চয়তা ,শুধু একতরফা না ,দুই তরফা ভালোবাসাতেও আছে ।যেমন হৃদ্য আর হৃদিতার ভালোবাসায় ।


হৃদ্য আর হৃদিতা ।অনেক বছরের অনেক ভালো ফ্রেন্ড তারা ।একজনের মন আরেকজনের কাছে খোলা বইয়ের মতো ,সহজেই পড়তে পারে ।হঠাত্ সেই বইয়ের পাতায় একটা নতুন অধ্যায় শুরু হবার আভাস পায় তারা ।একে অপরের প্রতি এতটা নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনে ,ভালোবাসার জালে ফেঁসে যেতে থাকে দুজন ।খুব সহজেই তারা একে অপরকে শেয়ার করে ব্যাপারটি ।পথ খুঁজে এটা থেকে দূরে সরার । কারণ আমাদের সমাজ তো এখনো হিন্দু ছেলে আর মুসলিম মেয়ের ভালোবাসা মেনে নিতে অভ্যস্থ হয়নি ।কিন্তু দূরে সরতে গিয়ে বুঝতে পারে অনুভূতিটা চুপিসারে অনেক গভীরে ছড়িয়ে গেছে ,এখন ভালোবাসাটুকু কেটে ফেলতে হলে পুরো হৃদয়টাকে কেটে ফেলে দিতে হবে !

অসহায় হয়ে যায় দুটো মানুষ ।আবেগের কাছে হার মেনে সিদ্ধান্ত নেয় সময় আর ভাগ্যের হাতে সব ছেড়ে দেয়ার ।হয়তো ঘর ছেড়ে ,সমাজ সংসার ছেড়ে ,দেশ ছেড়ে স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে পরে বিয়ে করবে কিন্তু একে অপরকে ছাড়তে পারবে না তারা ।এই অনিশ্চিয়তার মুখে চলছে তাদের পথচলা ।খুব সুন্দর রোমান্টিক কোন এক মূহুর্তে হঠাত্ স্তব্ধ হয়ে যায় হৃদিতা,"হৃদ্য,পাবো তো তোমায় আমি ? ভালোবাসা সার্থক করতে পারবো তো ?"

হাতটা চেপে ধরে সান্তনা দেয় হৃদ্য ।তবে নিজেও কি ভয় পায়না সে ?এত কঠিন কেন জীবনের সমীকরণ ।তবে তারা নিজেদের নিয়ে অনেক সুখী ।কিন্তু অর্ক আর অর্কজা তো নিজেদের ভালোবাসা নিয়েই সুখী না ।

অর্ক আর অর্কজা ।চশমাপড়া গোলগাল আতেঁল ছেলেটার প্রতি সদা অস্থিরচিত্তের মেয়ে অর্কজার যে খুব একটা আগ্রহ ছিল তা নয় ।একদিন
সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই গোবেচারা ছেলে ,যে কিনা মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকার নীতিতে বিশ্বাসী ,প্রপোজ করে তাকে । একটু সময় নিয়ে অর্কজা বুঝতে পারে সত্যিই অনেক চায় তাকে অর্ক ।কিন্তু রিলেশনে জড়ানোর কদিনপর থেকে তালটা কাটতে থাকে বারবার ।অর্ক তাকে নিজের মতো দেখতে চায় ।ওর দুষ্টুমি ,পাগলামী ,এক পাল বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি ,ঘোরাঘুরি ,ফেসবুকিং এসব একদম পছন্দ করে না ।সে চায় অর্কজার পুরো জগত্ শুধু সে হবে ,তার তো কোন বন্ধু নেই তেমন ,তার সবকিছু যেমন অর্কজা ,অর্কজারও এমন হতে হবে । কিন্তু স্বাধীনচেতা অর্কজা চায় সে যেমন অর্ক যেন তাকে সেভাবে গ্রহণ করে ।

মতের অমিলে ঝগড়া হওয়াটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ।অর্কজা বুঝে যে অর্ক তাকে ভালোবাসে অনেক ,কিন্তু তার নিজস্ব স্টাইলে ।অর্কজা তারচেয়ে বেশী কিছুর স্বপ্ন দেখতো ।তাই প্রত্যেকদিনের কলহ ,তার সব ব্যাপারে অর্কর সিদ্ধান্তের চাপ ,ডোমিনেন্সি ,মানিয়ে নিতে নিতে হাঁপিয়ে উঠে । প্রায়ই কতবার ভাবতেও বসে যে যেখানে সে সুখী না এমন সম্পর্কে আটকে থাকার মূল্য কতটুকু ?নিজের আত্মসম্মান বোধটা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে তার ।কিন্তু চাইলেও দূরে যেতে পারে না ।সারাদিন ঝগড়ার পর অর্ক যখন এসে হাতটা ধরে সব ভুলে যায় সে ।তখন আর শক্তি থাকেনা অর্কর মায়া থেকে পালানোর ।নিজেকে অনেকটা পরিবর্তন করে জীবন চলছে তার কিন্তু মন থেকে সুখ পাচ্ছে তো অর্কজা ?উত্তরটা নিয়ে ভাবতে ভয় ওর ।তারচেয়ে একরকম নিজেকে ফাঁকি দিয়ে এসব ভাবনা দূরে রেখে অর্কর ভালোবাসায় আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় সে ।তবু মাঝে মাঝে দম নিতে কেন যেন কষ্ট হয় ওর ।


এখানকার প্রতিটা ঘটনা-ব্রেকআপ ,আবার নতুন রিলেশনে জড়ানো ,পালিয়ে বিয়ে ,একতরফা ভালোবাসা ,ভিন্নধর্মের মাঝে প্রেম ,সম্পর্কের টানাপোড়ান এসব এখন খুব কমন ব্যাপার ।আশেপাশে তাকালে এমন অনেক উদাহরণ দেখতে পাবেন ।টিনএজ বা পরবর্তী কিছুটা সময় জীবনটাকে কঠিন মনে হবার অধিকাংশ কারণই প্রণয়ঘটিত ।কিন্তু প্রেম না করেই উপায় কি ?অবাধ্য মনটা যদি কাউকে ভালোবেসে ফেলেই মানুষের কি সাধ্য প্রেম থেকে দূরে থাকে ?আর কাউকে একবার সত্যিকারে ভালোবেসে ফেললে তাকে ছাড়া সুখি হওয়া যে কি কঠিন !

আবার যারা নিজের এই আবেগকে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেন ,তারা একবার ভাবেন যে বাবা মায়ের কথায় যে অচেনা বা স্বল্প
চেনা মানুষটাকে বিয়ে করবেন সে আপনার মনের মতো হবে কিনা ?কতটুকু বুঝবে আপনাকে ?দুজন মিলে মানিয়ে নিলে ভালো কিন্তু জোর করে মানিয়ে নিতে হলে এক সময় না একসময় মন বিরোধিতা করবেই ,তখন নিজেকে অসুখী মনে হবেই ! সবাই মন থেকে সুখ চায় ,কেউ কম্প্রমাইজ করে বাঁচতে চায় না ।সুখ যে কি সোনার হরিণ রে ভাই !

এবার একটা সুইট সুখের কাহিনী বলি ।


প্রিয় আর প্রিয়তা ।ক্যাম্পাসে আসার পর কদিনের মাঝেই প্রিয়তাকে বেশ মনে ধরে প্রিয়র ।বন্ধুত্বে ঝামেলা না বাঁধলেও প্রেমে আপত্তি প্রিয়তার ।"প্রেমে পড়া মানেই মা বাবাকে কষ্ট দেয়া,তাদের কাছে গোপন রাখা ,ধরা পড়ার ভয়"-যুক্তি প্রিয়তার ।পথ বাতলায় প্রিয় ।এরা একই দিনে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে দুজনের মাকে ।পরিচর করিয়ে দেয় বন্ধু হিসেবেই ।তারপর অনেক সাহস করে মায়েদের সামনেই প্রিয় বলে যে সে পছন্দ করে প্রিয়তাকে ,মায়েদের অনুমতি পেলে তারা রিলেশনটাকে ভালোবাসায় পরিণত করতে চায় ।মায়েরা অবাক হয়ে যায় এমন ধাক্কায় ।তারপর প্রাথমিক পর্যায়েই সৌজন্যমূলক ঝামেলা শেষে মেনে নেয় তাদের ভালোবাসা ।এখন তো সুখের শেষ নেই ।প্রিয়র বাড়ি এই শহরেই হওয়ায় প্রিয়তার জন্য প্রায়ই হবু শ্বশুড়বাড়ি থেকে খাবার আসে ।অসুস্থ হলে একগাদা ফল হাতে হবু শ্বাশুড়ি চলে আসে হোস্টেলে ।শ্বাশুড়ির সাথে শপিং এ যাবার কেউ নাই তো প্রিয়তাকে হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ।দুই পরিবারের দোয়া নিয়ে নিশ্চিন্তে প্রেম করে ওরা দুজন ।জীবনে সুখের কমতি আছে ???

হায়রে !কত রূপ যে আছে এই ভালোবাসার ।আমার এই ছোট্ট অনুর্বর মাথায় আর ধরে না রে ভাই ।তাই আমি এখানেই অফ যাই ।যারা প্রেম ভালোবাসার জালে বন্দী তারা ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকুন ,আর যারা এখনো একা আছেন ,অপেক্ষায় থাকুন তাদের পারফেক্ট-1 এর ।আর প্রেম ভালোবাসার উপর এই থিসিস পড়ে কারো মাথাব্যাথা করলে আমি কোনভাবেই দায়ী না ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

PC Based MikroTik Router OS Installation

থাই লটারি কিভাবে খেলবেন

লটারি জেতার কার্যকরী কৌশল জানেন কি?টিপস ও ট্রিকস